জানুয়ারী ৬
স্বপ্ন ও বাস্তব – বাবা
প্রাক-বামফ্রন্টযুগে শিক্ষকদের উপার্জন কত ছিল, তোমাদের পক্ষে জানা খুব সহজ। আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে সেই স্বল্প মাইনের আশি শতাংশ বাকী সবার জন্য রেখে অবশিষ্ট হাতে গোনা টাকায় আমাদের বাস্তবটা যে ভাবে চলত, তাকে হয়ত প্রকৃত অর্থে চলা বলে না! তাহলে, বাবার স্মরণসভায় আলোচিত একটা মানুষের বিভিন্ন দিকের ভালবাসা নিয়ে বেঁচে থাকাটা কি মিথ্যে? না, একেবারেই না। ওটা স্বপ্নের সৃজন।
একটা ঘটনা বলি। ১৯৯৭ এর পুজো। আমাদের হনিমুনে সিমলা পাহাড়ের উল্টোদিকে হিমাচল ট্যুরিজমের হোটেল থেকে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে দেখি চারিদিকে অজস্র জোনাকির সৌন্দর্য। বাবার Yashica 2000-এ প্রচুর ছবি তুললাম রাতের। ফিরে, develop আর print ক’রিয়ে, জানলাম, রাতের ছবি একটাও হয় নি।
বাবার পাশে বসে শিখলাম night photography। 2019, December-এর ছুটিতে আমার Nikon D810 এবং Nikon Trinity of Lenses নিয়ে আমরা তিনজন যখন Brooklyn Bridge থেকে Blue Hour Photography-র উদ্দেশ্যে চলেছি, সারা রাস্তা আমার চোখে জল।
একটি কলমের কাহিনী
মেজমামা যখন Jotter Refill-টা এনে দিল অফিস থেকে ফেরার পথে, আমার বয়স তখন সাত বা আট। পাঁচ বছরের আমি, শীতের দুপুরে অমলেন্দু জেঠুর কাছে , ওনার নীল Jotter Pen-এ যখন দু’দাঁড়িতে হাতি আঁকা শিখেছিলাম, তখন থেকেই আমার খুব ইচ্ছে হোত, যদি একটা Jotter Refill সমেত Pen পাওয়া যেত!
সে বার সরস্বতী পুজোয় উত্তরপাড়ায় মামার বাড়ি গিয়ে, মেজ মামাকে বলতে, এনে দিয়েছিল, নীল কালির Jotter Refill।
কিন্তু, Jotter Pen-টা তো কেউ কিনে দিলো না! তাহলে, Jotter Refill-টা দিয়ে লিখবো কি ভাবে? অনেক ভেবে চিন্তে, একটা কাগজকে, বার কয়েক ভাঁজ ক’রে, জড়িয়ে দিলাম, Refill-এর চারপাশে। একটা Rubber Band দিয়ে wrap ক’রে দিলাম ভালো ক’রে।
সরস্বতী পুজোর শেষে গুড়াপ ফিরলাম। ঠিকই ছিল সবকিছু।হঠাৎ একদিন সকালে, আমার হাতে ধরা, কাগজ wrap করা, Jotter Refill নিয়ে, আমার লেখার চেষ্টা চোখে পড়ল বাবার। সন্তান বা নিজের অসহায়তায় বুক ফাটলেও, কোন কথা না বলে, সেদিন সন্ধ্যেয় বাজার থেকে এনে দিয়েছিল, একটা Jotter Refill -এর জন্য ধূসর রঙের Pen। আমি কাগজের wrap থেকে, Jotter Refill-টাকে বের ক’রে, Jotter Pen-এ ঢুকিয়ে লিখতে শুরু ক’রলাম।
আজ, এই ভোরে, আমার Mont Blanc, Aurora, Lamy, Pelikan, Waterman …. আরও কত সব রঙীন কলমের মাঝে সেই কান্নার কালিতে লেখার কলমটার জন্য হু হু করে ভেতরটা!