প্রাইজ
অ্যাণ্ডির দেওয়া এই প্রাইজটা পেতে জন্মজন্মান্তরেও এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাই!
কত না কম্পিটিশন প্রাইজ পাওয়ার জন্য! স্কুলের পরীক্ষায় ফার্ষ্ট, সেকেণ্ড হওয়ার লড়াই, সাবজেক্টে প্রথম হওয়ার চেষ্টা। অফিসকাছারিতে সহকর্মীদের সঙ্গে কম্পিটিশন, Best Performer of the Year-এর প্রাইজ পাওয়ার জন্য । এই ভাবেই শৈশব গড়িয়ে বার্ধক্যে পৌঁছে যায় মানবজীবন!
এই অ্যাণ্ডি মানুষটির সঙ্গে পরিচয় বছর পাঁচেক আগে, অফিসের কাজের সূত্রে। বড় নামকরা কোম্পানীর কর্তা। আগাপাশতলা আমেরিকান সাহেব, স্যুটেডবুটেড, পাক্কা পেশাদার।
কিছুদিন পর থেকে দেখি, আমার বসার জায়গায় আসছেন মাঝেসাঝেই। কোনদিন কথা বলছেন আমীর খানের সিনেমা “থ্রি ইডিয়ট” নিয়ে, অন্যদিন “গীতা” বা যোগব্যয়াম নিয়ে। নিজের বাড়ির মানুষজনের সঙ্গেও আলাপ করিয়ে দিলেন একদিন।
কেন আসেন অ্যাণ্ডি আমার কাছে? জানি না। কাজের কথা বলারও প্রয়োজন ফুরিয়েছে।
কিছুদিন পর, একটা সিনেমা দেখবো বাড়ির সবাইকে নিয়ে, একটু আগে বেরুচ্ছি অফিস থেকে। দেখি, অ্যাণ্ডি, লিফ্টের সামনে। বললেন, আজ Tom Hanks-এর “A Beautiful Day in the Neighbourhood” দেখতে যাবো সবাই মিলে। স্তম্ভিত আমি, একই সিনেমা আমরাও দেখতে যাব। কিছু বললাম না। “See you” জানিয়ে, ফেরার পথ ধরলাম।
সারা রাস্তা একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেলো মনে, কে এই অ্যাণ্ডি?
দিন কয়েক পরে, অ্যাণ্ডি আসতেই, একটা কনফারেন্স রুমে গিয়ে, শান্ত স্বরে, জিগ্যেস করে ফেললাম, “কেনো আসো আমার কাছে? সারি দেওয়া বড়বড় ঘর পেরিয়ে, আমার কাছে কেন?”
কয়েক মুহূর্ত চুপচাপ। বিশাল কনফারেন্স রুমের থমকে থাকা নিস্তব্ধতা ভেঙে, গমগমে স্বরে আমেরিকান English accent-এ বলে চলেন অ্যাণ্ডি, “ব্যবসার কথা, কাজের কথা বলতে তো আর আসি না। ইঁটকাঠপাথরে ঘেরা নিউ ইয়র্ক সিটির অন্দরেগলিতে আমি মানুষ খুঁজি, সত্যিকারের মানুষ, যেখানেই পাই, আঁকড়ে ধরি, দুদণ্ড সময় কাটাই। বারবার, ভাল লাগে। সবাইকে তো যেতে হবেই, একটু ভালভাবেই যাই…এই আর কি!”
জানালা দিয়ে শেষ বিকেলের রোদ পড়েছে সারা দেওয়ালে, বড় মায়াবী মনে হয়, ফেলে আসা গ্রামবাংলার সূর্যাস্তের রঙের মতোই বড্ড কোমল!