অনাহূত
তিরিশটা বছর কেটে গেছে। দীপন নিজেকে অনেকটাই বুঝতে পারে আজকাল। সেদিনের অদ্ভুত কাজটা কেন করেছিল, সংশয়ের অন্ধকার কেটে, বেশ পরিষ্কার এখন তার কাছে।
***
আজ পলাশের বৌভাত। ধোপদুরস্ত পাঞ্জাবি–ধুতিতে সুদর্শন পলাশ সপ্রতিভ। সুসজ্জিত বিয়ে বাড়ির বড় হলটায় বর পলাশ বসেছে এক সিংহাসনে। পাশে নতুন বৌ।
হৈ হৈ করতে করতে ঢুকছে পলাশের অফিস colleague-রা। দীপনও ঢুকল। একটু তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে, পলাশের পাশের ছোট্ট চেয়ারটায় বসতেই, পলাশের চোখ পড়ল দীপনের দিকে। খুশিতে উজ্জ্বল চোখমুখ। জড়িয়ে ধরলো পলাশ দীপনকে, “আপনি আসবেন, ভাবতেই পারি নি! ভীষণ ভাল লাগছে।” নতুন বৌয়ের সঙ্গে ক্ষণিক আলাপ করেই, একটু দূরে গিয়ে বসল দীপন। ঠিক তখনই এসে পড়ল, উচ্ছল colleague-দের দল।
অন্যমনস্ক দীপন। বিলিতি সওদাগরি অফিসের hierarchy-র জটিল সমীকরণে দীপনকে নেমন্তন্ন করা হয়ে ওঠে নি পলাশের। কিন্তু কাজকর্মের ফাঁকে ফাঁকে, মৃদুহাসি, কথোপকথনে একটা আলাদা সখ্যতা ছিল ওদের দুজনের। কিন্তু বিলেতি আদবকায়দার ভগ্নস্তূপে, একটা glass wall তো থেকেই যায় hierarchy-র স্তরে স্তরে। Protocol নস্যাৎ করে মুক্ত বিচরণ সম্ভব হয়ে ওঠে না কাজের জায়গায়। দূরত্ব রাখাটাই নিয়ম।
তবুও পলাশের বৌভাতে না এসে থাকতে পারলো না দীপন। হয়তো তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে বেশী না ভেবেই চলে এল দলবলের সঙ্গে।
***
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এখন বেশ উপলব্ধি করে দীপন – ওই সব কাগজগুলো একেবারেই অর্থহীন। ডিগ্রী সার্টিফিকেটে হয়ত চাকরিটা মেলে, কিন্তু শিক্ষা মেলে কই! বিয়ের সার্টিফিকেটে একসঙ্গে থাকার অধিকারটা মেলে, সম্পর্ক তো পরম যত্নে নির্মাণের জিনিস! ভাবে, নাই বা পেল নেমন্তন্নর কাগজটা সেদিন!
রক্তের সম্পর্ক, কর্মসূত্রের সম্পর্ক, এই সব সম্পর্কের টানাপোড়েন ছাপিয়ে তো হৃদয়ের সম্পর্ক! অমলিন আজও!