লস এঞ্জেলেস ইন্টারন্যাশানাল এয়ারপোর্টের arrival lobby-তে বেরিয়েই, স্যুটকেস এবং বিশাল কাঠের বাক্স সামলে, কিছুটা উদ্ভ্রান্ত চাহনি বনলতার। বনলতা। নীরা অথবা নন্দিনীও হতে পারতো। বরুণা হওয়াও অসম্ভব ছিল না। কারণ যে কোন বাঙালী মেয়ের সঙ্গেই ওই বাক্সবন্দী হারমোনিয়ামের সম্পর্কটা ভীষণ ভীষণ খাঁটি। একটা স্বপ্ন বুকে করে বাঁচার সঙ্গী।
বিদেশবিঁভুই-এর দুর্গাপুজো-সরস্বতীপুজোতে খুব ব্যবহার হতো হারমোনিয়ামটা। কিন্তু বনলতার দৈনন্দিন পুজোর দেবতা সেই একজনই, কান্নাহাসির দোলদোলানো ঠাকুর!
বনলতার কাজের প্রয়োজনে অনেক শহর ঘুরলো হারমোনিয়ামটা। অনেকটা বুকের মধ্যে গোপন করা ন হন্যতে ভালবাসাটার মতো। কিন্তু বোঝার ভুলটা হলো রিচমণ্ড শহরে। ভারতীয় বাড়িতে নাকি প্রচুর সোনা থাকে, আর ওই হারমোনিয়ামে নাকি সোনা লুকিয়ে রাখা আছে! বাড়ি ফাঁকা পেয়ে এক রাতে কিছু অজানা স্বপ্নহীন মানুষ শাবল চালিয়ে দিলো হারমোনিয়ামটার বুকে।
বহুদিন কথা বলেনি ও! একেবারে শেষ হয়েও যায় নি কিন্তু! ঢাকনা খুললেই অশ্রুসিক্ত চোখে কিছু একটা বলতে চাইতো!
শেষমেশ, এই বিদেশে, হারমোনিয়ামের একমাত্র ডাক্তারখানা, নিউ জার্সির “সঙ্গীত”-এ, ভেতর-বাইরের সমস্ত ক্ষতচিহ্ন মুছে দিতেই, দীর্ঘশ্বাসের মতো “সা” বলল ও। ডাক্তার-ওস্তাদ জয়েসজী অনুযোগের সুরে বললেন, “ঢাকনাটা দেবেন না এর ওপর। ঘুরতে-ফিরতে বাজাবেন, গাইবেন, আর প্রাণভরে বাঁচবেন”!
এখন বনলতার রান্নাঘরের পাশেই থাকে সে। একটু পেলব স্পর্শ, হৃদয়ের উষ্ণতাটুকু পেলেই বলে ওঠে, “সোহম্”!